চালকের নির্দিষ্ট মুঠোফোনে কল দিলেই বাড়ি চলে যাবে ‘গরীবের এ্যাম্বুলেন্স’। গ্রামের মেঠোপথে যেখানে কোন চার চাকার যান্ত্রিক গাড়ী বা এ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারে না, সেখানে পৌঁছে যাবে এসব বিশেষ এ্যাম্বুলেন্স।

যেখানে কোন মানুষ অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে বেগ পেতে হত, এখন এই অঞ্চলের মানুষ সহজেই পাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। দিনে-রাতে যেকোন সময়ই রোগীদের সেবায় প্রস্তুত অটো থেকে রূপান্তরিত এই বিশেষ এ্যাম্বুলেন্স।

যান্ত্রিক এ অটোকে অনেকে শখ করেই ‘গরীবের এ্যাম্বুলেন্স’ বলে ডাকতে শুরু করেছে। দিন দিন সাড়া ফেলতে শুরু করেছে ‘গরীবের এ্যাম্বুলেন্স’ খ্যাত এই অটো। এমনকি প্রসূতি মায়েদের জন্যও রয়েছে বিশেষ সার্ভিস।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাটোরের বাগাতিপাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত পাঁচটি ইউনিয়ন। ইউনিয়নগুলো পাঁকা, জামনগর, বাগাতিপাড়া সদর, ফাগুয়াড়দিয়াড় ও দয়ারামপুর। প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র দূরে হওযায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হত না।

সে লক্ষ্যেই চলতি বছর মে মাসে বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রশাসন ৫টি ইউনিয়ন পরিষদকে পাঁচটি বিশেষ এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে। তৎকালীন ইউএনও নাসরিন বানু ইউপি চেয়ারম্যানদের হাতে এসব এ্যাম্বুলেন্সের চাবি তোলে দেন। চার্জার ব্যাটারী চালিত অটোকে রূপান্তর করে বিশেষ ধরনের এ ক্ষুদে এ্যাম্বুলেন্স তৈরি করা হয়েছে।

এসব এ্যাম্বুলেন্স ইউপি চেয়ারম্যানের অধীনে থাকে। তবে একজন করে গ্রাম পুলিশ এর চালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। নাম মাত্র ভাড়ায় রোগীদের আনা-নেওয়ার কাজ করা হয়। আর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ তাদের এ এ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

এ্যাম্বুলেন্সের সাথে দেওয়া হয়েছে সিমকার্ডসহ একটি করে মোবাইল সেট। আর এর নম্বরগুলো নিজ নিজ ইউনিয়নের এ্যাম্বুলেন্সের গায়ে লেখা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুমূর্ষু রোগী এবং প্রসূতি রোগীদের জরুরী চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ব্যাটারীচালিত অটোগুলো ভ্রাম্যমান এ্যাম্বুলেন্স হিসেবে কাজ শুরু করে।

রোগীরা জরুরী প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া মাত্র পৌঁছে যাবে রোগীদের দোর গোড়ায়। স্বল্প ভাড়ায় জেলা সদরের সরকারী হাসপাতাল ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী রোগী আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সেবা কার্যক্রম।

বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের যোগীপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ বৃদ্ধ আজিজুর রহমান জানান, কিছুদিন আগেই গ্রামের রোগীদের জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হলে গরুর গাড়ী, মহিষের গাড়ী, রিকশা ও ভ্যানের ওপর নির্ভর করতে হতো। অনেক সময় এগুলোও পাওয়া যেত না। কিন্তু গরীবের এ্যাম্বুলেন্স নামের এই ব্যাটারী চালিত অটো চালু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

তিনি আরো জানান, দিন-রাত সবসময় ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারে এই এ্যাম্বুলেন্সগুলো অবস্থান করে। চালকের কাছে থাকা নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন দেওয়া মাত্র তা পৌঁছে যায় রোগীর দরজায়। স্বল্প ভাড়ায় রোগী আনা নেওয়ার এ কার্যক্রম ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

ইউএনও প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের রোগীদের সেবার জন্য স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিচালনা ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং জাইকার অর্থায়নে উপজেলা পরিষদ থেকে পাঁচটি ইউনিয়নে একটি করে ব্যাটারী চালিত অটো থেকে মোডিফাইড এ্যাম্বুলেন্স ও একটি করে মোবাইল দিয়ে পরীক্ষামূলক এ্যাম্বুলেন্স অটো সেবার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

এ সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে সেবাটি অব্যাহত রাখতে রক্ষনা-বেক্ষণের জন্য উপজেলা পরিষদ অর্থ যোগান দেবে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।