‌এস এম জামিরুল ইসলাম; ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ আজ ৪৯ বছরে পদার্পণ করলো। ১৮ মিনিট দীর্ঘ স্থায়ী ছোট্ট একটা ভাষন যা বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার রক্ত গরম করার আহ্বান।১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী বাঙালি জাতিকে মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ ৭ই মার্চের সেই ভাষণেরই সফল পরিণতি স্বাধীন বাংলাদেশ।এখনো ভাষণটি শুনলেই বর্তমান প্রজন্মের শরীরে ঝঙ্কারের সৃষ্টি করে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে রক্ত গরম করে তোলে। মনে হয় ইস ঐ সময় যদি অামাদের জম্ন হতো বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতাম একটুকরা বাংলাদেশর জন্য দেশমাতৃকার রক্ষার জন্য নেমে যেতাম যুদ্ধে।

এ ভাষনের দ্বারা একটা বিষয় স্পষ্ট যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে কোন ব্যাক্তি যদি বাংলাদেশ জম্ন গ্রহণ না করতো তাহলে কোনভাবেই এ দেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করা যেত না।তিনি বাংলাদেশে জম্নগ্রহন করেছিলেন বলেই অাজ বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র নামে স্বকৃীত পেয়েছে। ৭ ই মার্চের ভাষনের দিনটি এসেছিল এক ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দলনের পটভূমিতে একদিনে আসে নি এর পিছনে অাছে বিশাল প্রেক্ষাপট মূলত বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি তাই তার এদেশের সব কিছুর ইতিহাস ছিল তার নখদর্পনে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামীলীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে তারা মূলত তাদের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।৭ই মার্চের এই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অমর বাণী “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”- তার এই একটি অব্যার্থ বাণীতেই পুরো মুক্তিযুদ্ধকাল সময়ে মানুষকে উজ্জীবিত রেখেছে।

প্রিয় নেতা যখন পাকিস্তান কারাগারে বন্দী। বেঁচে আছেন কিনা তাও জানা নেই। কিন্তু স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ঐ অমর ভাষণ জীবন-মরণের কঠিন দুঃসময়ে এক সঞ্জিবনী সুধার মত বিপন্ন মানুষকে সজিব রেখেছে।যার ফলস্বরূপ অর্জিত হলো এই স্বাধীনতা।বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে৷ গবেষণা হয়েছে৷ পাঠ্যপুস্তকেও ঠাঁই পেয়েছে। ১২টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়৷ সম্মোহিতকর ভাষন শুনে নিউজ উইক তাকে পয়েট অফ পলিটিক্স বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।কবি নির্মলেন্দু গুন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষনকে দেখেছেন অমর কবিতা হিসাবে অার বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন কবি হিসেবে।

২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে “ডকুমেন্টারী হেরিটেজ” (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি ৭ মার্চের বক্তৃতায় মানুষের মনের কথা বলেছেন ৷

আমার মতে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের সংবিধানের এই চার মূলনীতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথাই বলেছেন। তিনি বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন।আশার কথা বলেছেন৷ আর সে কারণে এখনো তাঁর সেই বক্তৃতা মানুষকে উজ্জীবিত করে৷ পৃথিবীর কোনো নেতা ১০ লাখ মানুষের মাঝে এরকম উদ্দীপনাময় ভাষণ দিয়েছেন বলে আমার জানা নাই৷ আজো মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে তাঁর ভাষণ বেঁচে আছে৷ থাকবে৷ তাই এটা অমর কবিতা৷ আর সেই কবিতার কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷

লেখক, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।