ওধুষ শিল্পের অভাবনীয় উন্নতি ঘটলেও এর বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে নকল, ভেজাল, নিন্মমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে মতলব উত্তর উপজেলার বাজার সয়লাব। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সেবন করে ৭ মাসের শিশু সাইম গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে অভিভাবক ওষুধের মোড়কে দেখেন ‘জুন ২০১৯ইং’ তারিখে ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শিশু সাইম মতলব উত্তর উপজেলার জহিরাবাদ ইউনিয়নের সানকিভাঙ্গা গ্রামের শহীদ উল্লাহর সন্তান।
শহীদ উল্লাহ জানান, ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের নতুনবাজারের নিতু ফার্মেসী থেকে বায়ো ফার্মা লিমিটেড কোম্পানীর বেস্টক্যাপ নামক সিরাপ চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করাই। ওষুধ খাওয়ানোর পর আমার সন্তান আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে চিকিৎসকের কাছে ওষুধসহ শিশুকে নিয়ে আসলে চিকিৎসক ওষুধের মোড়কে দেখেন গত মাসেই এ ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
শহিদ উল্লাহ আরো জানান, নিতু ফার্মেসীতে এ নিয়ে কথা বলতে আসলে তারা আমাকে পাত্তা না দেয়ায় স্থানীয়দের ঘটনাটি জানাই এবং ওষুধের বোতল-মোড়ক দেখাই। বর্তমানে আমার ছেলে সাইম গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর নিয়ে আসি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অলিউর রহমান মজুমদারের এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শহীদ উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, নিতু ফার্মেসীর মালিক সাজ্জাদ হোসেন শিপন দোকানে নিজে না থেকে ওষুধ সম্পর্কে কিছু না জানা নন ফার্মাসিষ্ট দিয়ে (কর্মচারী) দিয়ে ফার্মেসী ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। তার দোকানের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সেবনে আমার শিশু ছেলে সাইম গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আমি এ অন্যায়ের ন্যায় বিচার চাই।
নিতু ফার্মেসী মালিক সাজ্জাদ হোসেন শিপন বলেন, ওষুধ বিক্রির সময় আমি দোকানে ছিলাম না। কর্মচারী অসাবধানতা বশত: এ ওষুধ দিয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দোকানের পিছনে ‘বিক্রির জন্য নহে’ লেখা বক্সে রাখা হয়। ঘটনাটি জানার পর শিশুর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা করে দেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওধুধ মানেই বিষ। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটছে। এটি গণহত্যার সমান অপরাধ এবং অপরাধীর বিচার সেভাবেই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গত ছয় মাসের অভিযান প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রয়েছে। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধ ও অবিলম্বে সেগুলো প্রত্যাহারের নির্দেশনা চেয়ে ১৭ জুন জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশন।
একই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের মজুত ও বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রেতা, সরবরাহকারী ও সংরক্ষণকারীদের শনাক্ত করতে কমিটি গঠন করতে বলেছেন।
এ সময় তিনি জনসাধারণকে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখে ওষুধ ক্রয় এবং ওষুধের সঙ্গে নিবন্ধন আছে কিনা অর্থাৎ ওষুধের মোড়কে ডিএআর বা এমএ নম্বর আছে কিনা তা দেখে ক্রয় করার অনুরোধ করেন।