বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী ২৯ নং নন্দলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে আজ একটি মানসম্মত, আকর্ষনীয়, ডিজিটাল প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

শিক্ষকদের আন্তরিকতা, ম্যানেজিং কমিটির সার্বিক সহযোগিতা, সর্বোপরি অভিভাবক তথা এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ কুমারখালী উপজেলার প্রায় দুইশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবেই ‘এ+’ এবং বৃত্তি প্রাপ্তির দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য এবং ঈর্ষণীয় সফলতা দেখিয়ে আসছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে কুমারখালীর প্রাথমিক শিক্ষার ডিজিটালাইজেশনের নেপথ্য কারিগর, সুযোগ্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সার্বিক দিক নির্দেশনায় এবং ডিজিটাল সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি শুধু কুমারখালী নয় সারা বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে বিদ্যালয়টিতে যেসব কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটিঃ

(১) ই-মনিটরিং কার্যক্রমঃ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় অত্র বিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অফিস তথা বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে শ্রেণি কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারছেন।

(২) ওয়াই-ফাই( Wi-fi) জোনঃ বিদ্যালয়টিতে কুমারখালী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন ওয়াই-ফাই( Wi-fi) ব্রডব্যান্ড কানেকশন রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সার্বিক কার্যক্রম (শিক্ষকদের চিকিৎসাজনীত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বদলীজনিত কার্যক্রম, শ্রেণিকার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, কনটেন্ট আপলোড, ই-ব্যবস্থাপনা, ই-কনটেন্ট ডাউনলোড, ফেসবুকে তাৎক্ষণিক স্কুলকার্যক্রম আপলোড ইত্যাদি)শিক্ষকেরা অফিসে না যেয়ে বিদ্যালয়ে বসেই সম্পন্ন করতে পারছেন।যার ফলে শ্রেণিকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না।

(৩) মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুমঃ বিদ্যালয়টিতে সুসজ্জিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম রয়েছে। যেখানে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক কন্টেন্ট এবং ই-কন্টেন্ট-এর মাধ্যমে ক্লাশকার্যক্রম পরিচালিত হয়। যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া আরো চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষনীয় হয়েছে।।

(৪) (ICT) এর সর্বোত্তম ব্যবহারঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষককে ইন-হাউজ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইসিটিতে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। আর এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের সম্মানিত চারজন সরকারীভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ আইসিটি (ICT) শিক্ষক।

(৫)বিদ্যালয়টির আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার –পরিচ্ছন্ন যা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এখানে প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কিছু শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ এবং বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কারে দায়িত্ব দেওয়া আছে যারা নির্দিষ্ট সময় পরপর বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম মনিটরিং করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

(৬) ডিজিটাল ব্যানারঃ বিদ্যালয়টিতে ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সার্বিক অংশগ্রহণে র‍্যালী ও আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দিবস স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালন করা হয়।

(৭) ফুলের বাগানঃ দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ফুলের বাগান রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন রকমের ফুল গাছ টবে লাগিয়ে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বিদ্যালয়টিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।

(৮) ছাদ-কৃষিঃ বিদ্যালয়টির সুপরিসর ছাদে টবে বিভিন্ন ফলজ গাছ(যেমনঃপেয়ারা, আমড়া,লিচু ইত্যাদি) লাগিয়ে ছাদ-কৃষির ব্যবস্থা রয়েছে যেখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল পেয়ে থাকে।

(৯) সুশোভিত বৃক্ষঃ “গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান”-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন ধরনের ১৫টি ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো রয়েছে। এই বৃক্ষ বিদ্যালয়টিকে আরো সুশোভিত করেছে।

(১০) অফিসকক্ষ সজ্জিতকরণঃ ডিজিটাল মনিটরিং বোর্ড, ডিজিটাল ঘড়ি, সিটিজেন চার্টার, ডিজিটাল শিক্ষক পরিচিতি বোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে অফিস কক্ষ সাজানো।

(১১) শ্রেণিকক্ষে আয়না স্থাপনঃ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সোন্দর্যতা বজায়ে রাখার জন্য আয়না ও চিরুনির ব্যবস্থা রয়েছে।

(১২) অভিযোগ বাক্স স্থাপনঃ বিদ্য্যলয়ে সার্বিক কার্যক্রমে কারো অভিযোগ এবং পরামর্শ থাকলে তা লিখে অভিযোগ বাক্সে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে।

(১৩) ইন্টারনেট ভিত্তিক জানতে চাই কর্ণারঃ বিদ্যালয়টিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের নির্দেশনায় ইন্টারনেট ভিত্তিক “জানতে চাই কর্নার” চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীরা কি বিষয় জানতে চায় তা এই কর্নারে রক্ষিত একটি রেজিস্ট্রারে লিখে রাখে। নির্ধারিত শিক্ষক ইন্টারনেটে সার্চ করে বিষয়টি সচিত্র প্রদর্শন করেন। সচিত্র প্রদর্শনের ফলে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মনে রাখতে পারছে এবং একই সাথে তথ্য- প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রতি তাদের আগ্রহও বেড়ে যাচ্ছে।

(১৪) “দোকানদারবিহীন Trust Shop” স্থাপনঃ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে স্বনামধন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সার্বিক দিক নির্দেশনায় বিদ্যালয়টিতে “দোকানদারবিহীন Trust Shop” চালু হয়েছে। এখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসামগ্রী সুলভ মূল্যে ক্যাশবাক্সে টাকা রেখে ক্রয় করে-যা আসলেই প্রশংসার দাবীদার।

(১৫) শতভাগ স্কুল ড্রেসঃ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্কুলড্রেস রয়েছে। যা আসলেই দৃষ্টিনন্দন লাগে যখন বিদ্যালয়ের আঙিনায় সমাবেশে শিক্ষার্থীরা একত্রে অংশ নেয়।

(১৬) দোলনা ও ভারসাম্যঃ খেলাধুলার জন্য রয়েছে দোলনা ও ভারসাম্য।

(১৭) শ্রেণিকক্ষ নামকরণঃ শ্রেণিকক্ষ সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ(ছবিসম্বলিত} এবং ভবন দুইজন বিখ্যাত কবি ওসাহিত্যিকের নামে নামকরণ করা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীদের বীরশ্রেষ্ঠ এবং কবি সাহিত্যিকদের সম্বন্ধ্বে জানা আরো সুদৃঢ় হয়েছে।

(১৮) সীমানা প্রাচীর স্থাপনঃ সম্মানিত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়ের সীমানায় স্থাপিত সেলুন ঘর উচ্ছেদের পর সেখানে ৩৭ ফিটের একটি সীমানা প্রাচীর স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা অনেকখানি জোরদার হয়েছে এবং বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম আরো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

(১৯) স্পীকার এবং ডিজিটাল পিয়ানোর মাধ্যমে সমাবেশঃ সমাবেশের সময় ডিজিটাল পিয়ানো ব্যবহার করে সমাবেশকে আরো মনোমুগ্ধকর করা হয়।

সহকারী শিক্ষক, নন্দলালপুর সপ্রাবি, কুমারখালী, কুষ্টিয়া

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।