মো.সাজ্জাদ হোসেন; দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৫ ভাগের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যবস্থপনায় পরিচালিত। পিছিয়ে পড়া সমাজ বা অঞ্চলের মানুষের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই ধরনের ১. এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২.ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ এমপিওভুক্ত। কিছু প্রতিষ্ঠান ননএমপিও রয়েছে।
ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে মূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র থেকে অনেক দূরে। সমাজ বা দেশের কল্যাণ সাধনের জন্য সমাজ সেবক এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কর্তাব্যক্তিদের অনুমতি নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী, সরকারি , বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দের উদ্যোগে এবং তাদের নিজস্ব আর্থায়নেও দেশের আনাচে কানাচে তাদের ও পরিবারবর্গের নাম অনুসারে গড়ে উঠেছে অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্র-ছাত্রীর বেতন ও সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিবর্গের আর্থিক অনুদানে মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনন্দিন খরচ সংকুলান হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারি মাস শেষে দৈনন্দিন খরচের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বা সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিবর্গের অনুদান থেকে কিছু সম্মানি পেয়ে থাকে। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় হয়তবা অনেক কম। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষক কর্মচারি বেতন ভাতা নামক কোন আর্থিক সুযোগ সুবিধাই পাননা। ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন এবং সমাজ হিতৈষী মানুষের অনুদানের মাধ্যমে যেটা পাওয়া যায় তার সিংহ ভাগ খরচ হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো খাতে। শিক্ষকদের দেবার মত কোন টাকাই অবশিষ্ট থাকেনা।

সমাজের নিন্মবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করার কারণে অধিকাংশ ছেলে মেয়ে বিনা বেতনে, অর্ধবেতনে পড়ালেখা করার সুযোগ পাই। সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে গ্রামীণ পরিবেশে জরাজীর্ণ প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেনা। সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের কোন ছেলে মেয়ে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাও করেনা। নিজস্ব বিবেক বুদ্ধি,চিন্তা চেতনা,সুস্থ মস্তিষ্কে,সজ্ঞানে ও সমাজের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে গ্রামীণ ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার উদ্দেশ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবেসে,সম্মান করে নিজ ইচ্ছায় গ্রহণ করেছে এই পেশা। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে শিক্ষকতা শুরু করতে হয়। শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে অনেক শিক্ষক শিক্ষকতা করছে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো বঞ্চিত মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাধারণ গরীব দুঃখী মানুষ বিনা বেতনে,অর্ধ বেতনে বা নামমাত্র বেতনে ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পারে। ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারির জীবন আজ দুর্বিষহ। বছরের পর বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরম যত্নে ছাত্র-ছাত্রীদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মানুষ একমাত্র ননএমপিও শিক্ষক। বিনা বেতনে কাজ করার মানুষ অন্য কোন পেশায় পাওয়া যাবে কিনা সেটা সন্দেহ।

দীর্ঘ ১০ বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ২৭৩০ টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার জন্য তালিকা প্রস্তুত হয়েছিল। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কিছু অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে তাদের জন্য এমপিও কোড বরাদ্ধ হয়েছে। এখন শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন ভাতা পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিবছর এমপিওভুক্ত করার অভিপ্রায়ে ২০১৯ সালের শেষের দিকে গঠিত হয়েছিল এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটি। ননএমপিও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বেশ কয়েকটি মিটিং করে একটি নীতিমালার খসড়া নাকি দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ছয় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ও সেই নীতিমালাটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আর কতদিন পর সেটি আলোর মুখ দেখবে এবং নতুন ভাবে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া কতদিন পর শুরু হবে সেটি সবার কাছে আজ অজানা।

করোনার মহামারিতে ননএমপিও শিক্ষকদের জীবন আজ দুর্বিষহ। ধার দেনা করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। শিক্ষককে এখনও অনেক ব্যক্তি সম্মানের চোখে দেখে তাই তাদের সম্মানে কিছু ব্যক্তির নিকট থেকে এখনও ধারে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু সেটা আর কতদিন সম্ভব হবে? ধার ঋণতো একদিন পরিশোধ করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে পরিশোধ করবে?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সবার মনের কথা বোঝেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের দুঃখ দুর্দশার কথা একমাত্র আপনি বোঝেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা। আপনার দিকেই ননএমপিও শিক্ষক সমাজ আজ চেয়ে রয়েছে। আপনার নির্দেশেই খুলবে ননএমপিও শিক্ষকদের ভাগ্যের দুয়ার।

লেখক- প্রভাষক,হিসাব বিজ্ঞান, লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমাদের বাণী ডট কম/৩০ এপ্রিল ২০২০/পিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।