মো.সাজ্জাদ হোসেন;  কোভিড-১৯ এর থাবায় জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। সারা বিশ^ আজ গভীর সংকটে। করোনা ভাইরাসের আক্রমণে মানুষ আজ আতংকগ্রস্থ। ২ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। উন্নত বিশ্বে পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশ,অনুন্নত দেশ ও আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যে সমস্ত দেশ উন্নত তারা নিজেরা করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন লাশ হচ্ছে হাজারও মানুষ। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর থাবায় বিপর্যস্ত। থমকে গেছে জনজীবন। আতংকগ্রস্থ মানুষ ঘর থেকে বাড়ির বাহিরে যেতে পারছে না। খুব স্বল্প সময়ের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে যেতে হচ্ছে। স্কুল,কলেজ,বিশ^বিদ্যালয় সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান খোলা নেই। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন মানুষ। ইতিমধ্যে পরিবার পরিজন ছেড়ে বেশ কিছু মানুষ পরপারে পাড়ি দিয়েছে। অনেক পরিবার তার প্রিয়জনকে হারিয়েছে। যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছে তারাই জানে তাদের ভিতরের কষ্ট। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে প্রিয়জনের শেষ কার্য অনেক পরিবার সুসম্পন্ন করতে পারেনি। বুকের ভেতর হাহাকার নিয়ে,বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাদের পরিবারবর্গকে।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির অতিপ্রিয়জন হলো ডাক্তার এবং নার্স। মহান সৃষ্টিকর্তার পরে আজ তারা ডাক্তার এবং নার্সের মুখাপেক্ষি। ছোঁয়াচে ভাইরাসের কবলে পড়ে সারা বিশে^ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে কয়েক হাজার ডাক্তার এবং নার্স। মরণব্যাধির সংর্স্পশে আসলে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আজ তারা অসহায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে অসংখ্য মানুষকে। সুস্থ্য ব্যক্তির কাছে ডাক্তার এবং নার্স হয়ে উঠেছে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত দূত। সামনের সারির যোদ্ধা হয়ে বীরদর্পে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে ডাক্তার এবং নার্স। ইতিমধ্যে ডা.মাঈনুন্দিন গরীবের ডাক্তার নামে খ্যাত দেশপ্রেমিক,চিকিৎসাপ্রেমিক মহান সেবক জীবন দিয়েছে। মহান ডাক্তারদের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশত সদস্য আক্রান্ত হয়েছে। জীবন দিয়েছে জসিম উদ্দেিনর মত কয়েকজন গর্বিত পুঁলিশ বাহিনীর সদস্য। জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে প্রশাসনের কর্মচারি এবং কর্মকর্তাবৃন্দু। দেশবাসীর সচেতনার জন্য,দেশের নাগরিকদের সুস্থ্যতার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী,আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে গণমাধ্যম কর্মী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে,জীবন বিসর্জন দিয়ে নিজেই খবরের শিরোনাম হয়েছে মহান সংবাদকর্মী।

মন্দ কাজের আলাপ আলোচনার মধ্যেও করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে জনপ্রতিনিধি খোরশেদ আলম সহ সমাজ সচেতন অনেক ব্যক্তিবর্গ। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি ও ভিডিও দেখে দেশবাসী তাদেরকে স্যালুট জানিয়েছে।

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি অসহায় খেটে খাওয়া মানুষকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক কর্মী সহ সমাজ সচেতন দানবীর ব্যক্তিবর্গ। দুঃস্থদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সহায় সম্বলহীন নাজিম উদ্দিনের মত অনেক সাধারণ মানুষ। রাতের আঁধারে অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠন। গরীবের ত্রাণ আত্মসাৎ করে খবরের শিরোনাম হয়েছে অনেক জনপ্রতিনিধি। যাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে জনসেবার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল। সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়েছে। ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় কৃষকের ধান কেটে দিয়ে খবরের শিরোনাম হয়ে বাহবা পেয়েছে ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। আবার কৃষকের কাঁচাধান কেটে নষ্ট করে খবরের শিরোনাম হয়েছে বিবেক বুদ্ধিহীন অনেকে। ধান কাটার অভিনয় করে ফটোসেশনে এসেছে অনেক মানুষ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের দায়িত্বশীল সকলের কাছে বিশেষ অনুরোধ করোনা যুদ্ধে যারা সম্মুখ সারিতে অংশগ্রহণ করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেছে। দেশবাসীকে সচেতন করার জন্য যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে,ব্যক্তিস্বার্থ উপেক্ষা করে অসহায় দুর্গত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন,খাদ্য সহায়তা করেছেন,অসহায় কৃষক শ্রমিকের পাশে দাঁড়িয়েছে,জনগণের সেবা করতে গিয়ে যারা আক্রান্ত হয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে এবং নিজ পরিবারকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে তাদের ছবিসহ তালিকা তৈরি করে জনসম্মুখে প্রকাশ করুন। মুক্তিযোদ্ধাদের মত তারাও এদেশের বীর সৈনিক। মহামারি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে চলেছে। তাদেরকে দেখে সাধারণ মানুষ যেন তাদেরকে সম্মানিত করতে পারে। রাস্তাঘাটে চলাফেরার মাধ্যমে ও সবক্ষেত্রে তারা যেন সর্ব্বোচ্চ সম্মান পাই। জীবিত থাকাকালীন সম্মান প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করলে তার নিজের এবং দেশ ও জাতির কোন উপকারে আসেনা। মৃত মানুষের পক্ষে পৃথিবীকে দেওয়ার মত আর কিছুই থাকেনা। জীবিত মানুষকে সম্মান করলে দেশের কল্যাণে আরও বেশি মনোনিবেশ করার সুযোগ তৈরি হবে। তাদের দেখে তরুণ প্রজন্ম উৎসাহিত হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ তৈরিতে তরুণ সমাজ ভূমিকা রাখতে পারবে। গড়ে উঠবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

লেখক;  প্রভাষক, হিসাব বিজ্ঞান, লাউর ফতেহপুর ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমাদের বাণী ডট কম/০৭ মে ২০২০/এবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।