নিজস্ব সংবাদদাতা, বগুড়া; করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এমন সন্দেহে ইসমত আরা (২৬) নামে এক  গৃহবধূকে তার স্বামীর এলাকায় দাফন করতে দেয়নি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন। গত  রবিবার (২২ মার্চ ২০২০) মারা যান ওই নারী, পরে তাকে গতকাল  সোমবার (২৩ মার্চ ২০২০) রংপুরে তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে  জানা গেছে, জেলার গাবতলী দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের পাড়াবাইশা গ্রামে তাদের বাড়ি হলেও স্বামীর চাকরির সুবাদে এক বছর বয়সী জমজ সন্তান নিয়ে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

ইসমত আরার স্বামী আতোয়ার হোসেন জানান, গত শনিবার (২১ মার্চ ২০২০) তার স্ত্রীর পাতলা পায়খানা হয়। গতকাল রবিবার তিনি মারা যান। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে স্ত্রীর লাশ দাফনের জন্য নিজ গ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হন। কে বা কারা তার এলাকা গাবতলীর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে জানিয়েছে, ইসমত আরা করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া তার দুই সন্তানও অসুস্থ। যে কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ইসমত আরার লাশ পাড়াবাইশা গ্রামে দাফন না করতে এবং এলাকায় না নিতে চাপ প্রয়োগ করেন।

ভুক্তভোগী ঐ গৃহবধূর স্বামী আরও জানান, পরে তার শ্বশুর বিষয়টি জানতে পেরে মেয়ের লাশ রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সুখানচৌকি এলাকায় তার গ্রামে নিয়ে যেতে বলেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে সেখানে ইসমত আরার লাশ দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, লাশ আনার সময় পুলিশের চাপে নিজের ও সন্তানদের চেকাপ করাই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা আমাদের শরীরে কোনো অসুখ পাননি।

এ বিষ্গাযে বতলীর দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম সাইফুল এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিকে অবহিত করা হয়েছে। মৃত নারীর স্বামীকে করোনাভাইরাসের দাপট সম্পর্কে বোঝানো হয়েছে। তাই তিনি যা করেছেন তা জনস্বার্থে করেছেন। ভুল হয়ে থাকলে কিছু করার নেই।

জানতে চাইলে গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজা আহমেদ জানান, পুলিশ সারা রাত আতোয়ারের বাড়িতে পাহারা দিয়েছে। কিন্তু পরিবারের লোকজন লাশ এখানে না এনে রংপুরে নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রওনক জাহান বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শুধু এলাকাবাসীর চাপের মুখে ওই গৃহবধূর প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তাকে অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।’

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি নিজে ও জেলা প্রশাসক ফোনে চেষ্টা করেও কাউকে পাননি। পরে তিনি জানতে পারেন, রংপুরে বাবার বাড়িতে ওই গৃহবধূর লাশ দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই যেন বিদ্যুতের গতিতে এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এর সংখ্যা। সাথে লাশের মিছিলও হচ্ছে বড়।  দেশে করোনাভাইরাসে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে।

আজ মঙ্গলবার (২৪ মার্চ ২০২০) বিকেলে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন চারজন।

করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান। এছাড়া মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দেশের সব জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।

আমাদের বাণী ডট কম/২৪ মার্চ ২০২০/টিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।