বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কামারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুজ্জামান বাদলের (৫৫) বিরুদ্ধে পরীক্ষার হলে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর গায়ে হাত দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত বিচারে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রী ও তার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন।

ছাত্রীর মা জানান, শিক্ষক খায়রুজ্জামান বাদল অপরাধ স্বীকার করে তার ও মেয়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন, তাই তাকে ক্ষমা করা হয়েছে।

দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী জানান, তাদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার সময় বোর্ডের ওপর খাতা রেখে লিখতে সে অভ্যস্ত। গত বুধবার পরীক্ষার সময় সহকারী শিক্ষক খায়রুজ্জামান বাদল তার কাছ থেকে লেখার বোর্ড কেড়ে নেন। পরে বোর্ডে অনেকগুলো থুতু দেন এবং তার ওপর খাতা রেখে লিখতে বলেন। এ সময় শিক্ষককে এমনটা না করার অনুরোধ করেও ফল পাওয়া যায়নি। পরে ওই শিক্ষক হাতে থুতু নিয়ে গায়ে মেখে দেন।

মনিরা বেগম নামের এক শিক্ষিকা এই দৃশ্য দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে অভিযোগ করতে ছাত্রীকে পরামর্শ দেন।

ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, শিক্ষক খায়রুজ্জামান বারবার তার গায়ে হাত দিয়েছেন। প্রতিবাদ করেও তাকে থামানো যায়নি। এ ছাড়া তিনি অন্য ছাত্রীদের সঙ্গেও অশ্লীল কথা ও খারাপ আচরণ করেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শিক্ষক খায়রুজ্জামান বাদলের বিরুদ্ধে এর আগেও ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের কারণে বারবার বেঁচে যাচ্ছেন তিনি। তারা বলেন, ছাত্রীর পরিবার প্রথমে বিচার চাইলেও পরে প্রভাবশালী কোনো মহলের চাপে ঘটনাটি মীমাংসা করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।

ছাত্রীর মা জানান, দাদার বয়সী শিক্ষক বাদল অনেক বড় অপরাধ করেছেন। তবু তাদের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ায় ও ভবিষ্যতে এমন অপরাধ না করার অঙ্গীকার করায় তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও তাকে ফোন করেছিলেন বলে জানান তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক খায়রুজ্জামান বাদল জানান, তিনি শুধু ছাত্রীর বোর্ডে থুথু দেওয়ার অভিনয় করেছেন। আর তার মাথায় হাত দিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়ার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই ছাত্রীর সঙ্গে একটু মশকরা (রসিকতা) করেছেন মাত্র।

ওই শিক্ষকের দাবি, এর আগে আর কোনো ছাত্রীর সঙ্গে তিনি অশালীন আচরণ করেননি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ বিষয়ে বিচার করে আপোষ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুন জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। সে কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।