নিজস্ব সংবাদদাতা, বরিশাল;  জেলার গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তার (বিশেষ ভিজিএফ) পুরো চাল করোনা সংকটের মুহুর্তেও আত্মসাত করেছেন বার্থী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে নিজের অপকর্ম ঢাকতে ওই চেয়ারম্যান চালের পরিবর্তে তালিকাভূক্ত কয়েকজন কার্ডধারীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। ঘটনাটি

সুবিধা বঞ্চিত জেলে, ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান তার নিকট আত্মীয়, ব্যবসায়ী, কৃষক, প্রবাসীসহ অন্য পেশার অধিকাংশ ব্যক্তির নাম জেলেদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার (চেয়ারম্যান) অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকৃত জেলেরা সরকারের খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে জেলে ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বর) বজলুর রশিদ অভিযোগ করেন, বার্থী ইউনিয়নে ৮০ জন জেলের প্রত্যেকের নামে বরাদ্দকৃত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের ৮০কেজি চাল সঠিকভাবে বন্টন করা হয়নি। চাল বিতরনে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা।

এ কারণে আমার ওয়ার্ডের অধিকাংশ জেলে গত দুই মাসের বরাদ্দকৃত চাল পায়নি। জেলেদের চাল বিতরনের অনিয়মের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চেয়ারম্যান কয়েকদিন আগে বার্থীসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু সংখ্যক জেলের মাঝে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা করে বিতরন করেছেন। পশ্চিম বার্থী গ্রামের ২৭ জন জেলেকে চালের বদলে নগদ এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

বার্থী গ্রামের জেলে অমূল্য হালদার, কালাম সরদার অভিযোগ করে বলেন, এ বছর কোন খাদ্য সহায়তা পাইনি। জেলে না হয়েও আমার এলাকার অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে, তারা ত্রানও পাচ্ছেন। ওই গ্রামের জেলে মন্টু হাওলাদার ও আলম হাওলাদার বলেন, আমরা কিছুই পাইনি। কয়েকদিন আগে স্থানীয় মৎস্য চাষী তরনী রায়ের মাধ্যমে আমাদের কয়েকজন জেলেকে এক হাজার করে টাকা পৌঁছে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা। একইভাবে তাঁরাকুপি গ্রামের পলাশ রায় ৫০০ টাকা পেয়েছেন বলে জানান।

তবে জেলেদের চাল আত্মসাৎ ও তাদের মাঝে চালের পরিবর্তে টাকা প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বার্থীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্যাদা। তিনি জানান, আমি কোন অনিয়ম করিনি, আমার ইউনিয়নে ৮০ জন জেলের নামে বরাদ্দকৃত ২ মাসের চাল আমি ১৬০ জন জেলের মাঝে ভাগ করে দিয়েছি।

উপজেলা মৎস্য অফিসার সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৮৫৫ জন কার্ডধারী জেলের নামে খাদ্য সহায়তার সরকারি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ১১১ জন, বার্থী ইউনিয়নের ৮০জন, চাঁদশী ইউনিয়নের ৮০জন, মাহিলাড়া ইউনিয়নে ৯০জন, বাটাজোর ইউনিয়নের ৯০জন, নলচিড়া ইউনিয়নের ১৫০জন, সরিকল ইউনিয়নের ১৫০জন ও পৌরসভায় ১০৪ জন জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, বিধি মোতাবেক জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক জেলে পরিবারকে বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত এই চার মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০কেজি চাল দেয়ার সরকারী নির্দেশ রয়েছে। দুই কিস্তিতে এ চাল বিতরন করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রত্যেকবার একত্রে দুই মাসের জন্য ৮০ কেজি করে সরকারী ত্রানের চাল পাবেন প্রত্যেকটি জেলে পরিবার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের বরাদ্দ চাল গত দেড় মাস আগে দেয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই গৌরনদীর ৮৫৫জন জেলেদের মাঝে পূর্নরায় এপ্রিল ও মে মাসের চাল বিতরণ করা হবে।

অনিয়মের বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, জেলেদের মাঝে চাল বিতরনে অনিয়ম হয়েছে তা আমার জানানেই। মৎস্য অফিসার ও ত্রানের চাল বিতরণ কাজে সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসাররাও আমাকে কিছুই জানননি। তবে এ ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমাদের বাণী ডট কম/০২ মে ২০২০/পিপিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।