জয়পুরহাট সংবাদদাতা; জেলার সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের পালি গ্রামে করোনা আক্রান্ত এক নির্মাণ শ্রমিকের সংস্পর্শে একই গ্রামের ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে চারজনের ও শনিবার (৩০ মে) রাতের রিপোর্টে আরও সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া সদর উপজেলায় আরও দুইজন, ক্ষেতলাল উপজেলায় দুইজন, ও পাঁচবিবি উপজেলায় একজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

  • জেলায় এই প্রথম দুইজন চিকিৎসকসহ ১৪ জন ও শনিবার সকালের রিপোর্টে আরও পাঁচজনসহ ১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৮৪ জন। জেলায় ৭১ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

শনিবার দুই দফায় ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে পাঠানো রিপোর্টে ৩১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা।

  • ভাদসা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন জানান, ভোলা জেলা থেকে ২৫ বছরের এক নির্মাণ শ্রমিক জয়পুরহাটের পালি গ্রামে আসলে স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে। তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলে। কিন্ত ওই শ্রমিক তা পালন করে এলাকাবাসীর সঙ্গে মেলামেশা করেন। এতে প্রথম অবস্থায় এক সপ্তাহ আগে ভাদসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে, ২৫ বছরের যুবক ও ৪৫ বছরের এক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। শনিবার রাতের রিপোর্ট অনুযায়ী চেয়ারম্যানের স্ত্রী, ওই গ্রামের ১২ ও ১৪ বছরের দুইজন শিশু, শিশুর মা ও দাদিসহ আরও সাতজন করোনায় আক্রান্ত হন।

এছাড়া সদর উপজেলায় ভানাইকুশলিয়ায় ১০ বছরের শিশু ও নুরপুর গ্রামে গার্মেন্টস ফেরত এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ক্ষেতলাল উপজেলার মিবপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ৪০ বছরের এক ব্যক্তি, রসুলপুর গ্রামের ২৮ বছরের এক নারী ও পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই গ্রামের ২৫ বছরের এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

  • এই প্রথম জয়পুরহাটে দুইজন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত দুইজন কিছুদিন অগে সহকারী সার্জন হিসেবে জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দান করেন। পরে গোপীনাথপুর আইসোলেশন সেন্টারে অতিরিক্ত দায়িত্বে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা জানান, আক্রান্তরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ৩১৯ জনের মধ্যে ১৯ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। আক্রান্তদের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির আইসোলেশন ইউনিটে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আক্রান্ত দুইজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন গোপীনাথপুর আইসোলেশনে এবং একজন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (৩০মে ২০২০) তথ্য অনুযায়ী,গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০টি ল্যাবের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করেছি ১ হাজার ৪৪৩টি। নমুনা পরীক্ষা করেছি ৯ হাজার ৯৮৭টি গতকাল নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১১ হাজার ৩০১টি। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় এই সংগৃহীত নমুনা থেকে শনাক্ত রোগী পেয়েছি ১ হাজার ৭৬৪ জন। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০৮ জন। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছে ২৮ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু দাঁড়ালো ৬১০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সুস্থ হয়েছে ৩৬০ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ৯ হাজার ৩৭৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ০২ শতাংশ। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানানো হয়, পুরুষ ২৫ জন ও নারী তিনজন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাতজন, রংপুর বিভাগের দুইজন ও সিলেট বিভাগের একজন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা সিটির আছেন ১০ জন। বয়স বিশ্লেষণে জানা যায়, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে চারজন, ৪১-৫০ চারজন, ৫১-৬০ নয়জন, ৭১-৮০ তিনজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুইজন। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৬ জন ও বাকি দুজন বাড়িতে। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৪৬৯ জনকে। আইসোলেশন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে ৮০ জনকে।

আমাদের বাণী ডট কম/৩১  মে ২০২০/সিসিপি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।