আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে দলটি ইতিমধ্যে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

যদিও এখন পর্যন্ত দলটি তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। তবে এ দুই সিটিতে একাধিক প্রার্থী কাজ করলেও উত্তরের মেয়র পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন।

আর দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের সম্ভাবনাই এখন পর্যন্ত বেশি। কিন্তু দলের স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রার্থীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, গত ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে মির্জা আব্বাস প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। আর এবারও উত্তরে প্রার্থী তাবিথ আউয়াল থাকছেন।

তবে দক্ষিণের প্রার্থী পরিবর্তন আসতে পারে। ঢাকা দক্ষিণে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন দলের হাইকমান্ডের ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন- উন-নবী-খান সোহেল, সাবেক কমিশনার দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল বাশারের নামও শোনা যাচ্ছে এবং উত্তরে ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাছিদ আঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী হতে আগ্রহী বলেও সূত্রটি জানায়।

গত ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি করপোরশন নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রার্থী হতে মনোনয়ন তুলেছিলেন তাবিথ আউয়াল, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এবিষয়ে আমাদের এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো এটা তো আমরা আগেই নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই এখন আগে আমরা এবিষয়টি নিয়ে বসবো। এরপর পরবর্তী বিষয় নিয়ে বলতে পারবো। এর আগে কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোনো ভোটে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর উপজেলা নির্বাচন বর্জনও করে দলটি।

কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির অনেক নেতা উপজেলা নির্বাচন অংশ নেন। আর দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করে বিএনপি।

পরে গত ৫ জুলাই দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে দলের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএনপি। ওই বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপি আগামীতে স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেবে।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।

তিনি জানান, পুরো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

কেএম নূরুল হুদা বলেন, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও শেষ করে আনছে কমিশন সচিবালয় ও ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। তৈরি করা হয়েছে খসড়া ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের খসড়া তালিকায়। খসড়ায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৪৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে।

এই সিটিতে সম্ভাব্য ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের খসড়া তালিকায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি ও ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৬২২টি। দক্ষিণ সিটির সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৬ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ জন ও মহিলা ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৯ জন। কমিশন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যমান ভোটার তালিকায় এ দুই সিটিতে ভোট হবে। এর ফলে ভোটার তালিকায় হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে প্রার্থী বা ভোটার হতে পারবেন না।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে। এ হিসাবে ঢাকা উত্তরের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, আর দক্ষিণে একই বছরের ১৬ মে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।