তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ানো হচ্ছে ইংরেজি গ্রামার বই। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে পরিচিত দু’জন লেখকের ২৬০ পৃষ্ঠার একটি বিশাল গ্রামার বই পাঠ্য করা হয়েছে। এ বই নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাদের মতে, তৃতীয় শ্রেণীতে কোনো গ্রামার বই পাঠ্য থাকাই উচিত নয়। তার পরও পাঠ্য করা বইটিকে কোনো অবস্থাতেই তৃতীয় শ্রেণীর উপযুক্ত বলে মনে করেন না তারা। ২৬০ পৃষ্ঠার বিশাল ভারী গ্রামার বই তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠ্য হতে পারে না বলে জানান অনেক অভিভাবক।
বইটিতে ইংরেজি গ্রামার বিস্তারিত আলোচনার সাথে বিভিন্ন ধরনের চিঠিপত্র রচনা ও প্যারাগ্রাফ রয়েছে।

গ্রামার অংশে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা হলো টেন্স, পাটর্স অব স্পিস, সেন্টেন্স, ভাওয়েল, কনসোনেন্ট, ওয়ার্ড অ্যান্ড সিলেবাল, সাবজেক্ট অ্যান্ড প্রেডিকেট, নাউন, জেন্ডার, নাম্বার, কেস, প্রোনাউন, পার্সন, অ্যাডজেকটিভ, আর্টিকেল, ভার্ব, কানজাংশন অব ভার্ব, ইউজ অব রাইট ফর্ম অব ভার্বস, অ্যাডভার্ব, প্রিপজিশন, কনজাংশন, ইন্টারজেকশন, পাংচুয়েশন অ্যান্ড ক্যাপিটালাইজেশন, ডব্লিউ এইচ কোশ্চেন, কার্ডিনাল অ্যান্ড অর্ডিনাল নাম্বারস, ভাষা ও গ্রামারের সংজ্ঞা এবং বর্ণ।

রাজধানীর যেসব স্কুলে এ বইটি পড়ানো হচ্ছে তার মধ্যে একটি হলো নটর ডেম কলেজের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনিতে অবস্থিত একটি স্কুল। এ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর একজন অভিভাবক এ বইয়ের বিষয়ে বলেন, এ বই দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। সরকারিভাবে গ্রামার বই পাঠ্য করা হয়নি। কিন্তু স্কুলগুলো এসব বই শিশুদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ অভিভাবক বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে আমরা সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর প্রথম আমাদের জন্য গ্রামার বই পাঠ্য করা হয় স্কুল থেকে। এত ছোট শিশুদের জন্য এত বড় আর জটিল গ্রামার বই কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। এর নাম আসলে লেখাপড়া নয়। বরং ছেলেমেয়েদের ধ্বংস করা হচ্ছে এর মাধ্যমে। আর ছোট শিশুদের এ ধরনের কঠিন লেখাপড়া শেখাতে আমাদের অভিভাবকদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের নির্মমভাবে পিটিয়ে এসব লেখাপড়া গেলাতে বাধ্য করা হচ্ছে আমাদের। কারণ পরীক্ষায় এসব বই থেকে অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন করা হয়।

রাজধানীর বনশ্রীর বি, ডি, ই, জি ব্লকসহ বিভিন্ন ব্লকে অবস্থিত বিভিন্ন স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হচ্ছে বইটি। ডি ব্লকের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রের একজন অভিভাবক বলেন, স্কুল থেকে বইটি কিনতে হয়েছে তাদের। স্কুলের বাইরে থেকে কিনলে চলবে না। তিনি বলেন, এ স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভিন্ন বিষয়ে গাইড কেনায় অভিভাবকদের দিয়ে। তার পর পরীক্ষার আগে আবার স্কুলের কাছ থেকে নোট কিনতে হয়। তখন শুধু এ নোট পড়ে পরীক্ষা দিতে হয়। তখন গাইড কোনো কাজে লাগে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ অভিভাবক বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর জন্য যে গ্রামার বই পাঠ্য করা হয়েছে তা ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণীর জন্য উপযুক্ত।

কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন, বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব বইসহ আরো অনেক ধরনের বই বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দেয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে নোংরা ব্যবসা করছে বিভিন্ন স্কুল। দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে আসছে এসব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের নোংরামিতে লিপ্ত থাকে তাহলে তাদের কাছ থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে বলে প্রশ্ন করেন অপর একজন অভিভাবক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল এহসান বলেন, কোনো অবস্থাতেই তৃতীয় শ্রেণীতে এ ধরনের গ্রামার বই পাঠ্য করার কোনো সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধ। এ ধরনের লেখাপড়া আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না, বরং ক্ষতির কারণ। সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।