শিশুদের শিক্ষার মূলভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশুরা যদিও অ আ, ১ ২, ক খ পরিবার থেকেই শিখে, সেটার মূল ভিত্তি মজবুত করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চলতি বছরে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে সময়সূচিতে ব্যপক পরিবর্তন করেছে। চালু করা হয়েছে দুই শিফট এমনকি অর্ধদিবস বৃহস্পতিবারও এখন প্রায় পূর্ণদিবস।

নতুন সময়সূচী অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে এক শিফটের কার্যক্রম  শুরু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ও দুই শিফটের কার্যক্রম শুরু সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে এর ব্যতিক্রম গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নের সন্যাসদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে মানা হয়না সরকারি কোন নিয়ম কানুন, চলে নিজস্ব আইন ও কানুনে। শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে বিদ্যালয়ে আসেন আবার বিদ্যালয়ের ছুটিও দেন তাদের ইচ্ছেমতো।

চলতি শিক্ষা বর্ষের নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর বাধ্যবাধকতা  থাকলেও এখানে শিক্ষকরা  আসেন সকাল ১০-১১টায়। বিদ্যালয়ে এসে কোনো রকমে ইচ্চেমত একটা কিংবা দুইটা ক্লাস নেন, আবার কোনদিন নেনও না । দুপুর একটা বাজতেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে বাড়ি যান  শিক্ষকরা।

৪ ঘণ্টায় ৬ জন শিক্ষক একটি বা দুটি বিষয়ের ক্লাস নিয়ে বাড়ি চলে যান। এতে সরকারি এই  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে শিশুরা। সেই সেঙ্গ দিন দিন বেসরকারি বিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছে এখানকার শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গতকাল শনিবার (৪ জানুয়ারি ২০২০) দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে সন্যাসদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক নেই। অফিস সহকারী তাঁর কক্ষে বসে কম্পিউটার চালাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ছয়জনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকলেও সবাই ছিলেন অনুপস্থিত।

বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা একটু দূরে পদুমশহর ইউনিয়নের বাবুর বাজারে পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছে । এ সময় বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই বিষয়ে পড়ানো হয়। বাকি সময় খেলাধুলা করেই শেষ। দুপুরে আমাদের ছুটি দিয়ে বাড়ি যান শিক্ষকরা।

পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, পহেলা জানুয়ারি নতুন বই দেয়া হলেও ক্লাস নেয়ার বিষয়ে শিক্ষকদের আগ্রহ নেই। শিক্ষকরা নিজেদের মনমতো বিদ্যালয়ে আসেন আবার ইচ্ছামতো চলে যান। বছরের  শুরুতেই নতুন বই পেয়ে লেখাপড়ায় আগ্রহী হলেও শিক্ষকদের এমন অবহেলায় মনোযোগ হারাচ্ছে শিশুরা।

আব্দুস ছাত্তার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, বছরের ১ম দিন নতুন বই দিচ্ছে সরকার, যেন শিশুদের পড়ালেখায় কোনো ব্যঘাত না ঘটে। অথচ শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না। তারা যদি গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতো তাহলে ফলাফল আরও ভালো হতো।

তবে সময়ের আগেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটি দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সন্যাসদহ প্রধান শিক্ষক শিল্পী বেগম বলেন, বিদ্যালয় তো ছুটি হওয়ার কথা নয়। আমি খোঁজখবর নিয়ে জানাচ্ছি।

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বিষয়টি জানেন জানিয়ে বলেন,  বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।