এ এম জিয়াউর রহমান; বারবার একটি কথা বলা হয়, AUEO ১০ম গ্রেডে আছে, তাই প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেড দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এতে নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হবে। কিন্তু আমরা যদি বাস্তবতা পর্যালোচনা করি তাহলে কি দেখতে পাই! একটু বিশ্লেষণ করি–

একটা হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকের ১০ম গ্রেড আর একজন সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের গ্রেড হচ্ছে ১০ম। একজন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের গ্রেড হচ্ছে ষষ্ঠ, একজন জেলা শিক্ষা অফিসারের গ্রেড হচ্ছে ষষ্ঠ। একজন AD- DPEO, TEO -ADPEO একই গ্রেড এবং DG -ADG অতিরিক্ত সচিব, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে একজন পরিচালকও অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার হয়ে থাকেন।

মাঝে মাঝে এটাও অবলোকন করি, একজন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, ডিজি সবাই গ্রেড ওয়ান। এতগুলো ক্ষেত্রে যদি সমস্যা না হয়, তাহলে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১০ম গ্রেড দিলে সমস্যা কেন? আমার বুঝে আসেনা।

শিক্ষকের সাথে কারও তুলনা হয়না। শিক্ষকের মর্যাদার সাথে কর্মকর্তার গ্রেডের তুলনা করা ঠিক নয়। কর্মকর্তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুপারভিশন করবেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন প্রধান শিক্ষক। তিনি পরিচালকও বটে। সুতরাং তার গ্রেড কর্মকর্তার নিচে হওয়া উচিৎ নয়।

বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে প্রিন্সিপালের গ্রেড হচ্ছে ৪র্থ, কিন্তু তাদেরকে সুপারভিশন করেন ষষ্ঠ গ্রেডের জেলা শিক্ষা অফিসার অথবা এডিসি। আবার একজন সরকারি কলেজের প্রফেসর এবং একজন অধ্যক্ষ একই গ্রেডের। কই সেখানে তো কোন নিয়ন্ত্রনের সমস্যা হয়না। আসলে প্রাথমিক শিক্ষকদের ছোট করে দেখা হয়, তাই কর্মকর্তার সমান গ্রেড না দিতে যুক্তি দাড় করানো হয়।

আমার মতে শিক্ষক সারাজীবন শিক্ষকই থাকবেন। শতকরা ১০ জন হয়তো অফিসার হয়ে উপরের দিকে যাবেন, বাকিরা কিন্তু শিক্ষকই থাকবেন। সুতরাং যারা উপরে যাবেন তারা অনেক বেশি বেতন পাবেন, আর যারা শিক্ষক থাকবেন তারা অনেক নিম্নমানের বেতন পাবেন, এটা হওয়া উচিৎ নয়।

যারা পদোন্নতি পেয়ে অফিসার হবেন তারা ক্ষমতা ও মর্যাদা পাবেন। আর যারা শিক্ষক থাকবেন তারা বেতন ভাতা ঠিকই পাবেন, কিন্তু ক্ষমতা একটু কম ভোগ করবেন। যেমনটা আমরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, কলেজের প্রিন্সিপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করি।

তাই আমার মতে, শিক্ষকদেরকে যদি যথাযথ মর্যাদা দিয়ে হাইস্কুলের শিক্ষকদের মতো বেতন ভাতা ও মর্যাদা দেয়া যায়, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে,এতে কোন সন্দেহ নেই।

কাজেই সচিব মহোদয়ের কাছে আমাদের আবেদন, আপনি অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি বুঝিয়ে বলে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে দিন। প্রধান শিক্ষকের হাতে যদি ড্রয়িং -ডিসবার্সিং পাওয়ার থাকে এবং সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক যে ক্ষমতা ভোগ করেন, সেরকম ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে অফিসারের প্রয়োজন হবেনা, প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলে এবং উন্নয়ন কীভাবে হয়, সেটা সবাই বিস্মিত নয়নে অবলোকন করবে।

তবে প্রধান শিক্ষক পদে অবশ্যই প্রশাসন পরিচালনার মতো দক্ষ এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ বা পদোন্নতি দেয়া প্রয়োজন। আশা করি, সচিব স্যার বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন। আমাদের বিশ্বাস আপনি পারবেন।

লেখক: সহ-সভাপতি (কেন্দ্রিয় কমিটি),বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি

আমাদের বাণী ডট কম/০২ মার্চ ২০২০/ইএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।