যতই পড়িবে ততই কাঁদিবে- এ প্রবাদটিকে বলা যেতে পারে `লিখিব পড়িব মরিব দুঃখে, মৎস্য মারিব খাইব সুখে` প্রবাদের বিপরীত। লেখাপড়ার দরকার নেই বাছা; জেলে-জাইল্যার পেশা বেছে নাও- এমন তির্যক বাক্যবাণে বিদ্ধ করা হতো ধনবান পরিবারের বখে যাওয়া পুত্রদের লক্ষ্য করে। সম্ভবত প্রবাদটি যখন চালু হয়, তখন নারী শিক্ষার ওপর তেমন জোর পড়ত না। হাল আমলের বাংলাদেশে চিত্র ভিন্ন। নারীরাও সমানতালে শিক্ষাঙ্গনে পা রাখছে। তবে তাদের নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন প্রবাদ রচিত হয়নি। তবে প্রবাদটির বোধ করি এখন ভিন্ন অর্থ করার সময় এসেছে- চারদিকে এত শিক্ষার আলোয় আলোকিত লোক, অথচ তাদের অনেকেরই যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি মিলছে না।

চল্লিশতম বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন পড়েছে চার লাখের বেশি। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেতে ইচ্ছুক এত তরুণ-তরুণী আমাদের রয়েছে- এটা সুখবর। কিন্তু এ থেকে বেকারত্বের ভয়াবহ চিত্রও ফুটে ওঠে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ হাজার শিক্ষক পদের জন্য ২৪ লাখ আবেদন পড়ার তথ্যও দুশ্চিন্তায় না ফেলে পারে না।

কৃষিকাজের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। এক সময়ে ধান কাটার মৌসুমে দিনমজুররা বড় জোতের মালিকদের কাছে ধর্ণা দিত। এখন বিপরীত চিত্র- বোরো মৌসুমে জমির মালিকরা সাধাসাধি করেও কামলা পাচ্ছে না। কেবল ধান কাটার মৌসুমে নয়; বছরের প্রায় সব সময়েই মজুরের প্রবল চাহিদা; মজুরির রেটও বেশি। তাহলে কেন বলব না- যতই পড়িবে, ততই কাঁদিবে? তার চেয়ে কি লেখাপড়া বাদ দিয়ে দিনমজুর হওয়া ভালো নয়- দিনের অর্ধেক সময় কাজ করেই যখন ৫০০-৬০০ টাকা নিশ্চিত?

স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের অবস্থা একবার ভাবুন তো। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লাখ লাখ শিক্ষকের উদ্বেগ চরমে- তাদের প্রত্যেকের বেতন থেকে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ টাকা সরকার কেটে রাখবে। কেন এ কর্তন? শিক্ষকরা অবসর গ্রহণের পর পেনশন পান না, গ্র্যাচুইটি পান না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাদের জন্য অবসর ও কল্যাণ ফান্ড চালু করেছেন। এ ফান্ডের অর্থের জোগান আসে দুটি সূত্র থেকে- শিক্ষকদের প্রতি মাসে জমা অর্থ ও সরকারের অনুদান। তবে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা তিক্ত। যারা অবসরে যাচ্ছেন, তাদের পাওনা পরিশোধ করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন পড়ে। কারণ সরকার থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না। অতএব, সহজ সমাধানসূত্র বের হলো- লাখ লাখ শিক্ষকের কাছ থেকে বাড়তি ৪ শতাংশ অর্থ প্রতি মাসে কেটে রাখো। এভাবে কৈয়ের তেলে কৈ মাছ ভাজ!

কেন অবসর সুবিধা পেতে কয়েক বছর লেগে যায়- এ প্রশ্নে অবশ্য শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, `কিছু আবেদন আমরা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত বিবেচনা করি। যেমন হজে যাওয়া, ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো, মেয়ের বিয়ে ইত্যাদি। তাকে বলি- ক্যান্সার বা কিডনি ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি এমনকি আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই নগদ টাকা তার হাতে তুলে দেন, তাহলেও তো কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে সে অর্থ খরচ হয়ে যাবে।

শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ফান্ড পরিচালনা কমিটিতে শিক্ষকদের তরফে একজন প্রতিনিধি আছেন। তবে এটা সম্মানের পদ, কোনো আর্থিক সুবিধা নেই। সম্প্রতি একটি রটনা অবশ্য চাউর- তার জন্য বিলাসবহুল একটি গাড়ি কেনা হচ্ছে এবং এ জন্য অর্থের জোগান দেওয়া হবে শিক্ষকদের অবসর-কল্যাণ ফান্ডের জন্য তাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া অর্থ থেকে! ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ প্রবাদের এক্কেবারে সার্থক প্রয়োগ! ভূতের অস্তিত্ব নেই, তার আবার বাপ! তার আবার শ্রাদ্ধ!

বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি শনিবার আয়োজন করেছিল শিক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনার। শিক্ষকরা কেবল তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভাবেন না; সামগ্রিক শিক্ষা নিয়ে ভাবনা আছে তাদের। আলোচনায় উঠে আসে শিক্ষার মান বাড়ানোর তাগিদ। এ জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে- এ তাগিদ দেওয়া হয়। ঐতিহ্যবাহী বরিশাল ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আকতারুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করব না। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর অনেক আগেই সরকার জিডিপির ৬-৭ শতাংশ কিংবা প্রতি বছরের জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার অঙ্গীকার খোদ সরকারের। অন্য আলোচকরাও বলেন, শিক্ষার প্রসার ঘটেছে, সন্দেহ নেই। পাঁচ কোটির বেশি ছাত্রছাত্রী এখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আলোকিত করছে। দলে দলে মেয়েরা যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে। কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে সর্বোচ্চ হতাশা। এ সমস্যা সমাধানের পথ কী? ভালো অবকাঠামো চাই। ভালো শিক্ষক চাই। শিক্ষার জন্য ভালো উপকরণ চাই। সেরা মানের পাঠ্যবই ও সহায়ক বই চাই। সহায়ক বই মানে নোট-গাইড বই নয়; জ্ঞানচক্ষু খুলে দেবে, এমন অনেক অনেক বই চাই। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বশেষ জ্ঞান চাই।

উন্নয়নশীল দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্নও এখন অধরা মনে হয় না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর যেসব সেরা ছাত্রছাত্রী বের হয়, তারা কেন স্কুল-কলেজের শিক্ষকতায় যাবে- যদি আকর্ষণীয় হারে বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা না হয়? মান-মর্যাদার প্রশ্নও গুরুত্ব দাবি করে। বরিশালের আলোচনায় অংশ নিয়ে একটি অভিজ্ঞতা বলি- এভাবে- প্রধান ও উপপ্রধান শিক্ষকদের এক উপজেলা পর্যায়ের বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। উপস্থিত শিক্ষকদের প্রায় সবাই তার চেয়ে বেশি বয়সের। কিন্তু তিনি কথা বললেন চেয়ারে বসে, আর শিক্ষকরা বললেন দাঁড়িয়ে। তারা বিনয়ী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে বারবার সম্বোধন করছিলেন `স্যার`! সরকারি প্রশাসনের প্রশিক্ষণ বিষয় নিয়ে ভাবার সময় কি আসেনি?

স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়েও ভাবতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নির্বাচিত হয়ে আসে একটি অংশ। কমিটির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। তাদের অনেকে অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ, নোট-গাইড বই ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে যত মনোযোগী; শিক্ষার মান নিয়ে ততই যেন উদাসীন। একজন সংসদ সদস্যের অভিমত আলোচনায় এসেছিল এভাবে- তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাস্টার থেকে দারোয়ান-পিওন, যে কোনো নিয়োগ দেওয়ার সময় তার কথা রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কেও এটাই করতে হবে।

পিরোজপুরের একটি স্কুল এক সময় অনেক সেরা ছাত্রছাত্রী উপহার দিয়েছে দেশবাসীকে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলাম- এখন কেন ফল তেমন ভালো হয় না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, এখন যে ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে, তার সদস্যদের যদি আগের আমলে দায়িত্ব দেওয়া হতো, তাহলে ফল মোটেই ভালো হতো না। কথা বলতে বলতে প্রবীণ এ শিক্ষকের কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে; চোখ ছলছল করে। তিনি বলেন, কেবল আমি নই, অনেক স্কুল-কলেজেই ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত-অপমানিত হন। প্রশাসনে অনেক মেধাবীরা নিয়োগ পান। কিন্তু সেখান থেকেও ভালো কিছু মেলে না। পদে পদে ঘুষ-দুর্নীতি আর লাঞ্ছনা!

বরিশালে শিক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনায় একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসে- অতীতে যেমন পার্লামেন্টে রেলের জন্য পৃথক বাজেট উপস্থাপন করা হতো, তেমনভাবে শিক্ষার জন্যও পৃথক বাজেট উপস্থাপন করা হোক। এটা অযৌক্তিক বলে মনে হয় না। বর্তমানে দেশে ছাত্রছাত্রী পাঁচ কোটির বেশি। ধনবান থেকে দিনমজুর এমনকি ভিখারির পরিবারেও মিলবে বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রী। এক সময় শিক্ষা ছিল মূলত অতি মেধাবী ও ধনবান পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু এখন শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত ও মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর `অদম্য মেধাবী` শব্দ সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়। হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা না খেয়ে থাকতে রাজি; কিন্তু পড়াশোনা ছাড়তে রাজি নয়। একটি ঘটনা শুনেছি এভাবে- এক ধনী পরিবারের সন্তানের মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে যে কাজের বুয়া পরিচ্ছন্নতার কাজে সর্বক্ষণ ব্যস্ত ছিলেন, তিনি বেরসিকের মতোই বলে ওঠেন- `আমার মাইয়াও এইবারের পরীক্ষায় পাঁচ পাইছে।`

এমন সাফল্যের ঘটনা কিন্তু এখন অনেক অনেক হতদরিদ্র পরিবারে, কাজের বুয়া-ড্রাইভার-দিনমজুরের পরিবারে। এদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। ধনবান পরিবারের সন্তানরা পাঁচ-সাতজন শিক্ষকের কাছে কোচিং করতে পারে, পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে পারে। সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে। কিন্তু তাদের সংখ্যা তো সীমিত। এখন বলা হচ্ছে, ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে দেশের সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগের চেয়েও বেশি। আর অতি দরিদ্র অন্তত দুই কোটি লোকের হাতে রয়েছে অতি সামান্য সম্পদ। এদের জন্য রাষ্ট্র বরাদ্দ না বাড়ালে কীভাবে বাংলাদেশ দক্ষ মানবসম্পদ পাবে? তবে সম্পদ বরাদ্দ করাই যথেষ্ট নয়। এর যথাযথ ব্যবহার হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন। শিক্ষা খাতকে এ জন্য মডেল হিসেবে বেছে নেওয়া যেতেই পারে।

বরিশালে শিক্ষকদের বৈঠকে চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক বলেছেন, শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য পৃথক পে স্কেলের কথা বলা আছে। বাস্তবে শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা-অসম্মান প্রকট। শিক্ষকরা দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে রাজপথে নেমে আসেন। ধর্মঘট-অনশন করেন। পুলিশের পিটুনি খান, কাঁদানে গ্যাসে চোখ ভেজান। কেন তাদের এ পথে যেতে হবে? তিনি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝাতে একটি উদাহরণ দেন এভাবে- ফিলিপাইনের ১৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন দেশে কাজ করে। তারা বছরে দেশে অর্থ পাঠায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রবাসে কাজ করে। তারা দেশে বছরে পাঠায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এর মূল কারণ- ফিলিপাইনের কর্মীদের বড় অংশ কোনো না কোনো পেশায় দক্ষ; বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা বলা যাবে না। এখন পর্যন্ত `অদক্ষ` লেবেল লাগিয়েই আমাদের কর্মীদের বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমায়।

শিক্ষা বাজেটে এসব প্রসঙ্গ থাকতে পারে। শিশু-কিশোরদের সুস্থ-সবলভাবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলার গুরুত্ব সবাই উপলব্ধি করেন। তাদের পুষ্টির ব্যবস্থা করা চাই। আরও চাই উপযুক্ত শিক্ষা। যুগের চাহিদা বাড়ছে। কেবল সার্টিফিকেট যথেষ্ট নয়। গোটা বিশ্ব এখন তরুণদের কাজের জন্য উন্মুক্ত। দেশের স্বার্থ তাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল জোগান দিতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছি। এর অর্থ জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু মেশিন নিয়েছি উন্নত দেশ থেকে। অতি দক্ষ জনবল নিতে হয়েছে উন্নত দেশ থেকে। এমনটা বেশিদিন চলুক- সেটা কাম্য হতে পারে না। পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেছি। এটা একটি চেতনার নাম। ক্রমে সর্বত্র এটা ছড়িয়ে দিতে হবে।

শুরু করেছিলাম `…মৎস্য মারিব খাইব সুখে` প্রবাদ দিয়ে। যদি মাছ চাষে তরুণ-তরুণীরা দক্ষ হয়ে ওঠে, সমস্যা নেই। তারা একদিকে যেমন প্রোটিনের জোগান দেবে, পাশাপাশি নিজেদের আয়ও বহুগুণে বাড়িয়ে নিতে পারবে। একই সঙ্গে আমাদের শ্রমশক্তির একটি অংশকে গড়ে তুলতে হবে বিশ্ববাজারের উপযোগী করে। তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেধার প্রতিযোগিতায় যেন টিকতে পারে, তার প্রতি চাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব। পৃথক শিক্ষা বাজেট চালু হলে এ ধরনের আরও অগ্রাধিকার স্পষ্ট করে যেতে পারে। যে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগের বেশি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক, তাদের জন্য পৃথক বাজেট প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।

শিক্ষার জন্য সরকারকেই বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। তবে একইসঙ্গে বেসরকারি সূত্র থেকে অর্থ জোগানোর জন্যও সচেষ্ট হওয়া চাই। শিক্ষার প্রসারে সচ্ছল জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে অর্থ, জমি দিচ্ছে। অনেক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি `ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়েছেন`। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী বা অ্যালামনাইদের কাছ থেকেও অর্থ মিলতে পারে। কোথাও বেশি মিলবে, কোথাও কম। তবে এ জন্য অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সচ্ছতা-জবাবদিহিতা। কাদের হাতে অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা দেখতে চাইতেই পারেন দাতারা।

লেখক: সাংবাদিক
[email protected]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।