মো. মাসুম আহমেদ;  পৃথিবীর অমোঘ নিয়মে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। সকালের ঝকঝকে রোদ দুপুরে গড়ায়, দুপুর গড়িয়ে অপরাহ্নের ছায়া দীর্ঘতর হয়, অতঃপর নামে রাতের আঁধার। মানুষের জীবনও তেমনি শৈশব, কৈশোর ও যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়। যেখানে শৈশবের প্রথম পর্যায়ে শিশুরা কোথা থেকে আসে এবং মানুষ কীভাবে কোনো কিছু তৈরি করে এই দুটি বিষয় শিশুদের মনে কৌতূহলের উদ্রেক করে।

শিশুরা প্রথমে পুতুল বা খেলনাকে জীবন্ত মনে করে। পরবর্তীতে তারা খেলনা ও মানুষকে আলাদা করে চিনতে পারে। আর শিশুর থেকে যা চলে যায় তা মৃত্যুর সমান। গান, বাজনার সুর ও ছন্দ, ব্যঙ্গচিত্র, কার্টুন দেখে শিশুরা আনন্দ পায়। এ বয়সে তারা গণনা শেখা, মাস, ঋতু, বছরের নাম, নিজ নাম, ঠিকানা, ডান হাত, বাম হাত, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সহ জেনে নেয়। এছাড়া শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো বুঝতে শেখে। এসময়ে শিশুদের আবেগীয় পরিবর্তন ঘন ঘন লক্ষ্য করা যায়।নির্দিষ্ট পরিবেশের অভাবে রেগে গেলে চিৎকার, লাথি মারা, মেঝেতে গড়াগড়ি, ভয় পেয়ে নিরানন্দ, ভালবাসার মাধ্যম হিসাবে মা – বাবাকে চুমো, আনন্দ পেলে প্রাণ খুলে হাসা হাসি করে বিশেষ করে পছন্দের খেলনা, হাতে তালি দিলে।

শিশুদের মানসিক  বিকাশের ক্ষেত্র গুলোতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। নিরাপদ পরিবেশ, সুরক্ষা ব্যবস্থা, খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সকল শিশু সমান ভাবে পাচ্ছে কি না তা দেখা দরকার।কেননা সংবিধান সবার সমান সুযোগের নিশ্চিতের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। যে শিশুটি আজ পরিমিতবস্ত, খাদ্য, শিক্ষার পরিবেশ পাচ্ছে তার জন্য পৃথিবী সবসময় তার পাশে, আর যে শিশু এসব থেকে বঞ্চিত তার জন্য এ পৃথিবী বোঝা স্বরুপ। বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৩.৯%। স্কুলে যায় না এমন শিশু প্রায় ৩০ %। কেন সাক্ষরতার হার তুলনামূলক হারে বাড়ছে না, কেন এখনো অনেক শিশুকে বিদ্যালয় মূখী করা যাচ্ছে না তার কারন খুঁজে বের করতে হবে।

ছোট্ট একটা কাজ করার সুবাদে অনেক দূর্গম এলাকা ঘুড়ে বেরিয়েছি। তাদের অভাব অভিযোগের সাথে তাল মিলাতে হয়েছে আমাকে। হয়ত দুমুঠো ভাত, বস্ত্র কোন মতে পেলেও তারা সঠিক গাইড লাইনের কারনে বইপত্র, খাতা -কলম, বিদ্যালয়ের প্রতি অমনোযোগী। বিশেষ করে তাদের পরিবেশটাই বেশি দায়ী।

দুর্গম অঞ্চল গুলোতে দেখা যায় বিদ্যালয় গুলো নাগালের বাইরে এতে করে শিশুদের যেমন যাওয়া আসা সমস্যা, সেক্ষেত্রে ঐ সব স্কুলের শিক্ষদেরও অনীহা শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে। এতে করে দেখা যায় বছরের পর বছর অবহেলিত এ বিদ্যালয় গুলো। দেখা যায় নাম মাত্র একজন শিক্ষক দিয়েই চলে শিক্ষা কার্যক্রম। যেখানে এসব শিশুদের বিনোদন দিয়ে শেখার কথা সেখানে ঐ একমাত্র শিক্ষক বিদ্যালয় কে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শিক্ষার নামে হাসির পাত্র হচ্ছেন। যেখানে অনেক শিক্ষক হলে ভিন্ন ভিন্ন মত, কৌশল, অভিজ্ঞতা দ্বারা বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারত, শিশুরাও আগ্রহী হত প্রতিদিন নতুন বিনোদনের আশায়। জীবনকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে শিশুদের মুক্তবুদ্ধি চর্চার জন্য বিদ্যালয় অপরিহার্য। আর বিদ্যালয়ের সেই পরিবেশ আজ সময়ের দাবী।

পাখিকে মুক্ত বিহঙ্গে মানায়, তেমনি শিশুকেও। প্রাকৃতিক কারনে অনেকদিন আটকে থাকা শিশুদের শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট দায়ী হতে দেওয়া যাবে না। কারন আমাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে এর যথেষ্ট সমাধান  প্যানেল করে শিক্ষক নিয়োগ। মুজিববর্ষে মুজিবীয় আদর্শে সকল শিশুর অন্তর গড়ে ওঠবে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষকদের শিক্ষার আলোয় এমন প্রত্যাশা এখন সবার মুখে মুখে। শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মত পবিত্র। যেকোন জাতি, বংশ কিংবা গোত্রেই জন্মগ্রহন করুক না কেন, সকল শিশুই সমান। তাদের এই সমধিকার নিশ্চিতে অন্যতম মৌলিক চাহিদা প্রাথমিক শিক্ষার সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ।

শিক্ষক সংকটে প্যানেল গঠন করে নিয়োগ হবে সংকটকালীন সেরা সময়োপযোগী পদক্ষেপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিটি প্যানেল প্রত্যাশীর ত বটেই, প্রতিটি শিশু ও তাদের অভিভাবকদের চাওয়াও হোক ” শিক্ষক সংকট আর নয়। পর্যাপ্ত আধুনিক শিক্ষক আর ঝাক ঝাক হাসিমুখে(ছাত্র/ছাত্রী) ভরে উঠুক করোনা পরবর্তী সময়ে স্কুলগুলো।

লেখক;  যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কমিটি, পাবনা জেলা।

আমাদের বাণী ডট কম/০২ মে ২০২০/সিসিপি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।