নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে  বর্তমানে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে আছে। এই টাকা আদায়ে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু কোনো পদক্ষেপেই এই বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না। যে কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রথমবারের মতো আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন, ২০২০’ নামে ইতোমধ্যে নতুন এই আইনের একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনে আদায় বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন ২০২০’-এর খসড়া প্রণয়নের পর এখন সর্বসাধারণের মতামত নেওয়ার জন্য তা প্রকাশ করেছে।

লাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে নতুন প্রণীত এই আইনের খসড়া অনুযায়ী ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন’ গঠন করে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকারি বিশেষায়িত এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি আদায়ে সম্ভব সব ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজন মনে করলে ঋণখেলাপির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে পারবে। পারবে লিজে দিতেও। ঋণখেলাপির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখল, পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন এবং ঋণ পুনর্গঠনও করতে পারবে। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর এই প্রথম কোনো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে এত ক্ষমতা দিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, ‘ননপারফরমিং’ ঋণ আদায় ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই আইন প্রাধান্য পাবে। খবর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রের।

নতুন এ আইনে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে খসড়ায় বলা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ননপারফরমিং ঋণ আদায় ও ব্যবস্থাপনা, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হওয়ার প্রবণতা কমানো, বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও উৎসাহ প্রদান এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের জন্যই এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

খসড়া আইনের ধারা ২৩-এ করপোরেশনের ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণসহ কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে পারবে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিক্রয় বা লিজ দিতে পারবে। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটি চাইলে ঋণগ্রহীতার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠন করতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে করপোরেশনের এক বা একাধিক এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি ঋণখেলাপি হয় তা হলে এজেন্ট প্রশাসকের ক্ষমতা পাবে। ঋণগ্রহীতার বকেয়া নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে করপোরেশনকে। এ ছাড়া জামানতের দখল, সুরক্ষা, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লিজ বা বিক্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। ঋণগ্রহীতার ঋণের সম্পূর্ণ বা যে কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তর করতে পারবে। করপোরেশন নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারবে। শুধু দেশের নয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ঋণখেলাপি হলে সে ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা এবং মামলা করতে পারবে করপোরেশন। যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ করপোরেশন কিনবে সেগুলো আদায়ের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে এবং মামলায় পক্ষ হতে পারবে। আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষমতা বা অধিকার করপোরেশন পাবে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের আইন প্রয়োজন আছে। তবে সেখানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া দরকার। তবে সার্বিকভাবে খেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। সরকার এর মাধ্যমে উদ্যোগ নিচ্ছে এটি ভালো। তবে এর আগে রাজনৈতিক কারণে ঋণ দেওয়া-নেওয়া বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আইন পাসের আগে অন্যান্য দেশে এ ধরনের আইনে কী বলা আছে তা দেখা উচিত বলে পরামর্শ তার।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করবে। প্রতিটি ব্যাংক পৃথক পৃথকভাবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে সেগুলো করপোরেশনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করবে। তার পর করপোরেশন সে খেলাপি ঋণ আদায়ে সোচ্চার হবে। এ ক্ষেত্রে করপোরেশন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক আদায়কৃত খেলাপি ঋণের অংশ নেবে।

সরকার চাইলে করপোরেশন খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে পারবে। তবে করপোরেশন প্রতিবছর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে দেবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য করপোরেশন কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার স্থাপন করবে। আর এর সঙ্গে ঋণের জামানত রেজিস্ট্রি প্ল্যাটফর্মের সমন্বয় করবে।

খসড়া আইনের ধারা ৭ এবং ৮-এর মধ্যে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনের শেয়ার মূলধন এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারে বলা হয়েছে। ধারা ৭ মোতাবেক করপোরেশনের অনুমোদিত শেয়ার মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০০ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত হবে। সরকার সময় সময় অনুমোদিত শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করবে। করপোরেশনের পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকার চাইলে তা আরও বাড়াতে পারবে।

করপোরেশনের চেয়ারম্যান হবেন পদাধিকার বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। এর পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ হবে তিন বছর। এক-তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত হলেই এর কোরাম পূর্ণ হবে বলে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাদের বাণী ডট কম/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০/এপি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।