নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; দিল্লীতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের উপর বিজেপির হামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক নিহত ও পাাঁচ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখার দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বামপন্থী জোট।

গতকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০) বিকাল সাড়ে চারটায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে
বাম গণতান্ত্রিক জোট।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বহুধর্ম বহু ভাষাভাষির দেশ ভারত আজ হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের ধর্মীয় উগ্রতার কারণে সাম্প্রদায়িক ভারতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক উন্মাদনায় দিল্লী জ্বলছে। অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে এই উগ্র অন্ধত্ববাদি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করছে। নেতৃবৃন্দ ভারতের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ আরোও বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের কথা বলে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে সংসদে একটি বিতর্কীত বিল, ‘ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ (ক্যাব) উত্থাপন ও পাশ করার মাধ্যমে সিএএ অর্থাৎ সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছে। আইন প্রণয়নের পর সারা ভারতে নানা ধর্মে বিশ্বাসী  নাগরিকরা তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার অশঙ্কায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ, উদ্বেগ ও ক্ষুব্ধতা তৈরি হয় যা পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক-বিভেদে রূপ নিয়ে রাজধানী দিল্লির আশেপাশে কয়েকটি অঞ্চল জাফরাবাদ, গোকুলপুর, কারওয়াল নগর, মৌজপুর, সিলমপুর, চাঁদবাগে দাঙ্গা আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সে দাঙ্গায় গত কয়েক দিনে ৩৯ জন নাগরিক নিহত হয়েছে, শত শত মানুষ আহত হয়েছে, অনেক ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যাপক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্ফু জারি করেছে। পুনরায় হামলার আশঙ্কায় অনেক মুসলিম নাগরিককে গতকাল বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে দেখা গেছে। অনেক মুসলিমকে প্রতিবেশী হিন্দুরা আশ্রয় দিচ্ছে বলেও গণমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ভোটের জন্য জনগণকে বিভক্ত ও সংঘাতে জড়িয়ে ফেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান শ্লোগান তুলে বহু বৈচিত্র্যের ভারতকে ধ্বংস করছে তারা। কখনো বাবরী মসজিদ, কখনো পুলওয়ামা, কখনো কাশ্মির ইস্যু তুলে তারা হিন্দু মুসলিম বিভেদকে জাগিয়ে রাখছে। বৃহৎ কর্পোরেট মালিকদের শোষন ও জনগণের দারিদ্র্য আড়াল করতে ধর্মীয় কার্ডকে বার বার ব্যবহার করছে বিজেপি। শাসকশ্রেণি গদী দখলের সহজ পথ অবলম্বনের জন্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন জ্বালিয়েছে বার বার। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শ্রমিক কৃষক দরিদ্র মানুষ। ভারতের রাজ্যে রাজ্যে যে সহিংসতার আগুন জ্বালিয়েছে বিজেপি তার পরিণতি ভয়ংকর হবে বলে নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। এই নাগরিকত্ব আইন করে একদিকে হিন্দু মুসলিম বিভাজন সৃষ্টি করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছে অন্যদিকে অনাগরিক ঘোষণা করে বাংগালী হিন্দু-মুসলমানদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করার চক্রান্ত করছে। আর পুশব্যাক করার কথা বলে বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারত অন্যায়ভাবে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক, ভৌগলিক স্বার্থ আদায় করতে চাইছে। নেতৃবৃন্দ ভারতের এহেন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও বাংলাদেশের নতজানু শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানর জানান।

নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের জনসাধারণকে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে পা না দেয়ার আহ্বান জানান এবং ভারতের অসাম্প্রদায়িক জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে অভিনন্দন জানান। উভয় দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে পারে বলে নেতৃবৃন্দ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরানা পল্টনে গিয়ে শেষ হয়।

আমাদের বাণী ডট কম/২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০/এবি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।