এস কে শহিদ; ১৯৭৬ সাল থেকেই প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট চলে আসছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান ও উপযুক্ত শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ।

  • ২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত ভাবে পদায়ন করা হয় ১৮ হাজার পরীক্ষার্থীদের । কিন্তু তার মধ্যে থেকেও অনেকে ভালো গ্রেডের চাকরির সুযোগ পেয়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন যার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের বেশি। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের অধিক শূন্যপদ রয়েছে । আমার কক্সবাজার জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষক সংকট মারাত্বক আকার ধারণ করেছে।

শিক্ষক সংকটের কারনে বছরের শুরুতেই পাঠদান মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার দুর্গম এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা যেতে চান না যার কারণে নানা রকম তদবির এবং অপকৌশল খাটিয়ে পছন্দসই এলাকায় চলে যাওয়ার কারনে জেলায় প্রচুর শিক্ষকের পদ শূন্য রয়ে গেছে। তাছাড়া শিক্ষক স্বল্পতার কারনে প্রতি বছর প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় কাংখিত ফলাফল অর্জিত হচ্ছেনা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষক স্বল্পতার প্রভাব পড়েছে। কমে যাচ্ছে পাশের হার এবং ভেঙে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনোবল।

  • একটি প্রতিবেদন হতে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় অবস্থিত ৬২ নং নিদান তরানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় সরকারিকরণ হয়েছিল ” জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান” এর সময়কালে। এখানে ছাত্র ছাত্রী রয়েছে ৫ শতেরও অধিক। শিক্ষক রয়েছে ৩- ৪ জন।প্রধান শিক্ষক নেই, ১ জন সহকারি শিক্ষকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। আর ৩ জন শিক্ষক দ্বারা স্কুলে পাঠ দান পরিচালিত হয়।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হতে জানতে পারলাম যে, শিক্ষক সংকট থাকার কারণে ছাত্র – ছাত্রীদের যথা সময় পাঠদান সম্পন্ন করতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। আর করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের আশে পাশে বিদ্যুৎ না থাকায় সংসদ টেলিভিশন দেখতে না পারার কারণে লেখাপড়া হতে বঞ্চিত হচ্ছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী।

  • এ বিদ্যালয়টি ছাড়াও কক্সবাজার জেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে একই রকম চিত্র। বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষিকাগন মাতৃত্বকালীন ছুটির নিয়ে চলে যাওয়ার কারণে তীব্রতর হচ্ছে শিক্ষক সংকট। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত শিক্ষকদের দাবি, যদি প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং বেগবান করতে পারবেন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।

বিপুল পরিমাণে শূন্যপদ খালি রাখার কারণে একদিকে যেমন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে এবং একই সাথে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক ২০১৮ লিখিত পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে মেধায় উত্তীর্ণ ৩৭ হাজার পরীক্ষার্থীরা চরম বেকারত্বের অভিশাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যার মধ্যে অনেকেরই চাকরির বয়স শেষ। প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে একজন দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরির মূল স্তম্ভ।

  • তাই নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা, চলমান শিক্ষক সংকট মোকাবেলা, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও এসডিজি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য শূন্যপদ পূরনের ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেলে নিয়োগ দেওয়াই হবে উপযুক্ত সমাধান এবং একই সাথে পূর্ণ হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুজিব বর্ষে প্রতি ঘরে ঘরে একজন করে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ।

লেখক, প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী, কক্সবাজার জেলা।

আমাদের বাণী ডট কম/০৭ জুন ২০২০/সিসিপি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।