আরফান চৌধুরী আরাফ ; নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক থাকলেও গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে চরম সংকট। এর ফলে মানসম্মত শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের নিম্নও নিম্নমধ্য আয়ের পরিবারের সন্তানরা। চরম শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম ।

  • জেলার সেনবাগ উপজেলার এনায়েতপুরে অবস্থিত এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৭৩ সালে এবং সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ করা হয় ২০০৬ সালে। এ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের পদ রয়েছে ৭ টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন শিক্ষক যার মধ্যে ১ জন ভারপ্রাপ্ত নারী প্রধান শিক্ষিকা ও বাকি ২ জন সহকারি শিক্ষক, শিক্ষিকা। ফলে ফাঁকা রয়ে গেছে আরও ৪ টি শূন্যপদ। বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১০৪ জন। মোট শিক্ষার্থীর বিপরীতে যেখানে ৭ জন শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল সেখানে মাত্র ৩ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে প্রতিনিয়ত সঠিক ও মৌলিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।

এলাকার সচেতন স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের মুখ থেকে ফুটে উঠেছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের করুন চিত্র। প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক থাকায় শিক্ষকদের একসাথে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় যা শিক্ষকদের জন্য যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে না থাকার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন ওদিক ছুটোছুটি করে বেড়ায়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের যথাযথ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে ।

  • জেলার অন্যসব বিদ্যালয় গুলোতেও একই রকম চিত্র দেখা যায়। বেশির ভাগ বিদ্যালয়েই ২ বা ৩ জন শিক্ষক দিয়েই চালানো হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম তার মধ্যে নেই কোনো প্রধান শিক্ষক। এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আকলিমা আক্তার এর তথ্য মতে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে গেছেন ১ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় আগে। যার ফলে তিনি এই ১ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বহন করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন যেটা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, জেলার গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের কারণে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যেখানে ঠিকমতো পাঠদান করানোই সম্ভব হচ্ছে না, সেখান প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারা ও বিভিন্ন অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোটা কেটে শহরের অতিরিক্ত কোটা তৈরি করে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, শহরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক যদি থাকে তা আমি জেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা করে দেখব। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি অনুযায়ী যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলতে যা করণীয় তাই করা হবে।

তাই নোয়াখালী জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে চরম শিক্ষক সংকট অবসান করতে ও শিশু শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেলের প্রবর্তন করাটা এখন সময়ের দাবি মাত্র। প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নিয়োগ বঞ্চিত ৩৭ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীদের যদি প্যানেল প্রবর্তন করে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে জেলার বিপর্যস্ত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান দ্রুত গতিতে উন্নয়ন করা সম্ভব হবে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মুজিব বর্ষে প্রতি ঘরে ঘরে একজন করে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনেকাংশে পূরন করা সম্ভব হবে। এতে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে ৩৭ হাজার নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষার্থী এবং উন্নত হবে প্রাথমিক শিক্ষা।

লেখক, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী, সেনবাগ, নোয়াখালী।

আমাদের বাণী ডট কম/১২ জুন ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।